স্মিথ ওপেনিংয়ে: কেন ও কীভাবে?

n

শুরুতে প্রস্তাবটা অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকদের একটু ‘মাথা খারাপ!’ বিস্ময়ে ফেলেই এসেছিল।

nnnn

ব্র্যাডম্যান-পরবর্তী অস্ট্রেলিয়ার সেরা টেস্ট ব্যাটার ওপেনিংয়ে নামবেন? মানে, স্টিভেন স্মিথকে ফেলা হবে নতুন বলের লটারির মুখে? শোনামাত্রই ‘যত্ত সব বাজে কথা’ বলে তাড়িয়ে দিয়েছেন সবাই। লাঠি না ভাঙলে জোড়া লাগাতে যাওয়ার পাগলামি কেন করবেন তারা!

nnnn

হ্যাঁ, ব্যাটিং অর্ডারে একটা রদবদলের কথা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট পাড়ায় শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুটা সময় ধরেই, হর্তাকর্তারা বেশ আগ্রহীও ছিলেন; তবে পট পরিবর্তনটা যে স্টিভেন স্মিথকে ঘিরেই হবে, এমন কিছুর সম্ভাবনা ঘুণাক্ষরেও উদয় হয়নি কারও মনে। 

nnnn

ওহ, একজনের হয়েছিল। স্বয়ং স্মিথের। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কর্তাদের কানেও দু-একবার তুলেছিলেন কথাটা, তবে তাদের নড়েচড়ে বসতে হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিনে। সেদিনই প্রথম জনসম্মুখে স্মিথ নিয়ে আসেন ওপেনিংয়ে উঠে আসতে তার আকাঙ্ক্ষার কথা।

nnn

n

এবার স্মিথের নতুন চ্যালেঞ্জ চাই। Image: Getty Images

nnn

তবে, ক্রিকেটার চাইলেন আর হয়ে গেল, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট তো কোনোকালেই এই ব্যাকরণ মেনে চলেনি। তা ক্রিকেটারের নাম যতই স্টিভেন স্মিথ হোক, তার নামের পাশে সাড়ে নয় হাজার টেস্ট রান থাকুক। তাই, স্মিথ নিজের ইচ্ছে প্রকাশ্যে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যখন ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স এবং কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড মিডিয়ার সামনে এলেন, কেউই ঘোষণা দিয়ে দেননি, স্মিথই ওপেনার হচ্ছেন। তারা সময় নিয়েছেন।

nnnn

অপেক্ষার ফলটা জানা গিয়েছিল বুধবার। সাংবাদিক সম্মেলন করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি জানিয়ে দেন, স্মিথই হচ্ছেন ওয়ার্নার-উত্তর অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট ওপেনার।

nnn

n

এক সময়ের সতীর্থ এখন প্রধান নির্বাচক। Image: Getty Images

nnn

এই নাটকীয় পট পরিবর্তনের নেপথ্যে কী, সেটা নিয়েই যত প্রশ্ন। ৩৪ বছর বয়সে, ৫৮.০১ গড়ে ৯,৫১৪ টেস্ট রান করে, যার সবই আবার ৩-৬ নম্বরে ব্যাট করে করা হয়েছে, হঠাৎ করে নিশ্চয়ই টেস্টে ব্যাটিং উদ্বোধনের জন্য উৎসুক হয়ে উঠবেন না। ব্যাটিং করাটা যে নতুন লাল বলের বিপক্ষেই সবচেয়ে দুরূহ, এক বাক্যে মেনে নেন ক্রিকেট দুনিয়ার সবাই। আর রিকি পন্টিং, অ্যালান বোর্ডারদের ক্যারিয়ারে তাকালে তো মনে হয়, ক্যারিয়ার এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিং অর্ডারে পিছিয়ে যাওয়াটাই ক্রিকেটারদের পছন্দ।

nnnn

কিন্তু স্মিথ একদমই উল্টো পথে হাঁটলেন, এর কারণ তিনি একটা নতুন চ্যালেঞ্জ চাইছিলেন ক্যারিয়ারে। নির্বাচকদের কেবল জানার প্রয়োজন ছিল, তিনি এই চ্যালেঞ্জটা জয় করতে লেগে থাকতে রাজি কি না। তারা এটা জানতে চেয়ে ছিলেন, ‘ধরো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অল্প রানে আউট হয়ে গেলে কিংবা দিনের খেলার ১০ মিনিট বাকি, তখন ব্যাটে নেমে দল তোমার উইকেট হারালো, তুমি কি এরপরও চারে নেমে যেতে চাইবে না? এই নতুন চ্যালেঞ্জ জিততে সংকল্পবদ্ধ থাকবে?’

nnnn

‘সেন্ট পারসেন্ট’, স্মিথের উত্তর ছিল দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠেই।

nnn

n

ক্যারিয়ারে তো সবই জিতেছেন স্মিথ, ওপেনিংয়ের চ্যালেঞ্জটাও জিতবেন? Image: Getty Images

nnn

বেইলি যে সিদ্ধান্তটাকে বলেছেন নিঃস্বার্থ। অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে তো তেমনটাই। ক্যামেরন গ্রিনের যে চার নম্বর জায়গাটা পছন্দ, সেটা শেফিল্ড শিল্ডে তার রেকর্ডে চোখ বুলালেই টের পাওয়া যায়। ওপরে উসমান খাজা, স্মিথ, মার্নাস লাবুশেনের পরে গ্রিন; এরপরও কামিন্স ছয় বোলারকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন প্রতিপক্ষের ওপর, এর চেয়ে ভয়ংকর কোনো দল তো হতে পারে না, অন্তত কাগজে-কলমে।

nnnn

তবে স্মিথের চোখে চিন্তা করলে একটু স্বার্থও বোধ হয় লুকিয়ে। এই অস্ট্রেলিয়া-গ্রীষ্মের শুরুতেও স্মিথ নিজেই জানিয়েছেন, ক্রিকেটটাকে এখন ‘দৈনিক’ ভিত্তিতে চিন্তা করতে চান তিনি। নাথান লায়ন যেমন টার্গেট করেছেন ২০২৭ অ্যাশেজকে, অনেক খোঁচাখুঁচি করেও স্মিথের মুখ থেকে বের করা যায়নি এমন কোনো লক্ষ্যের কথা।

nnnn

আর ডেভিড ওয়ার্নারের মতো সাড়ম্বরে জানিয়ে বিদায় নেওয়াটা কখনোই যে হবে না তার, এ সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সাংবাদিকরা একরকম নিঃসন্দেহই। আজীবনই তো প্রবৃত্তি-নির্ভর লোক তিনি। হয়তো কোনো এক সকালে ঘুম ভাঙার পরে মনে হলো ‘যথেষ্ট ক্রিকেট হয়েছে, এবার ক্ষান্তি দাও’; ব্যস, সেদিনই সাংবাদিক ডেকে-টেকে ঘোষণা দিয়ে দেবেন ক্যারিয়ারের ইতির।

nnn

n

ওয়ার্নারের মতো সাড়ম্বরে বিদায় নেবেন না স্মিথ। Image: Getty Images

nnn

তবে সময়টা খুব দ্রুত এসে পড়ছে কি না, সেই সন্দেহটা জাগতে শুরু করেছিল অতি সম্প্রতি। স্মিথ রান করছিলেন ঠিকই, তবুও কোথাও একটা যেন মনে হচ্ছিল, তার ভেতরের ক্রিকেট-তাড়নাটা মরে যাচ্ছে একটু একটু করে। অস্ট্রেলিয়া দলে লাবুশেনের সঙ্গেই তো সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ তিনি, সেই লাবুশেনকেই একান্ত আলাপচারিতায় একবার বলে ফেলেছিলেন, নতুন কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে মুখিয়ে আছেন তিনি।

nnnn

আপনিই বলুন তো, চার নম্বরে আর কোন চ্যালেঞ্জ জিততে বাকি রেখেছিলেন স্মিথ? গেল বছরটাই হতে পারে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। ভারত সফরে যাচ্ছেন, যাওয়ার আগে কি করে স্মিথ উদ্দীপ্ত করতেন নিজেকে, যেখানে আগেরবার গিয়েই তিন সেঞ্চুরি করে এসেছেন তিনি। ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ খেলতে গেলেন, সেখানে আগের সফরেই ১১০ গড়ে রান করে এসেছেন। 

nnn

n

সেই একই শর্ট বল, পুল… উফফ! Image: Getty Images

nnn

মাঝের ওভারে ধৈর্য ধরে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জটা জিততে জিততেও যেন ক্লান্তি পেয়ে বসেছিল তার। নেইল ওয়াগনার বাউন্সারের পর বাউন্সার করে যাচ্ছেন, স্মিথ বল ছাড়ছেন, ডুয়েলটা জিতছেন… ইংল্যান্ড লেগ সাইড ফিল্ডার দিয়ে ভর্তি করে ফিরিয়ে এনেছিল বডিলাইনের স্মৃতি, সেটা জিতেছেন। পাকিস্তান আবার সিডনিতে বেছে নিয়েছিল অফ সাইড ভর্তি করে ওয়াইড লাইনে বল করার ট্যাকটিকস। স্মিথ তো এর আগেও বহুবার এই ধাঁধার মুখে পড়েছেন, সমাধান বের করেছেন। বলুন, সেই একই ছাঁচে বারবার পড়াটা, স্মিথের কি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক ছিল? আজীবন যদি শাহরুখ খানকে অভিনয় করতে বলা হতো ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র রাজ চরিত্রে, তা সিনেমাটা যতই তাকে জনমনে টিকিয়ে রাখুক অবিসংবাদিত সম্রাট হিসেবে, উনিও তো এই ২০২৩ পর্যন্ত ক্যারিয়ার টানতে পারতেন না আগ্রহ হারিয়ে।

nnnn

এই মানসিক অবসাদের একটা ছাপ কি টের পাওয়া যাচ্ছিল স্মিথের ব্যাটিংয়ে? গত বছর ৪২.২২ গড়ে রান করেছেন তিনি, করেছেন ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সেঞ্চুরি, অ্যাশেজে পাওয়া গিয়েছে লর্ডস-স্পেশালও; তবুও স্মিথকে যেন স্মিথ মনে হচ্ছিল না ঠিক। রানগুলো যেন স্মিথের মতো অতিমানবের জায়গায় কোনো মানবিক মূর্তি থাকলেও পেতেন।

nnn

n

স্মিথ ধার হারাচ্ছিলেন? Image: ESPNCRICINFO

nnn

ওপরের ছবিটাই দেখুন। প্রতিপক্ষ এখনো স্মিথকে আউট করতে নাকের জল-চোখের জল কম খরচা করছে না, তবে স্মিথের জন্য রান করাটাকেও আর ‘ফান’ লাগছে না। ক্যারিয়ারজুড়ে যেখানে ৫৩.৫১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি, গত বছর স্ট্রাইক রেট নেমে এসেছিল ৪৬-এ। আর সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজে তো ৪০-এ।

nnnn

এখানেই স্মিথ পেলেন নতুন বলের চ্যালেঞ্জ জেতার অনুপ্রেরণা। কোনো অদ্ভুতুড়ে লেগ সাইড রিং নয়, প্রতিপক্ষ রাখবে তিন স্লিপ আর গালি। শর্ট বলে নয়, তাকে ঘায়েল করতে চাইবে সুইং আর সিম মুভমেন্টে। লাবুশেনের আউট হওয়ার অপেক্ষায় থেকে ড্রেসিংরুমে বসে মাছি মারা নয়, তার আগের ব্যাটারদের রানের পাহাড় জমা করতে দেখে বা বলটা পুরানো হয়ে যাওয়াতে প্রতিপক্ষের আক্রমণের ছেড়ে রক্ষণের রাস্তা বাছাও নয়, স্মিথ এখন নামবেন ০/০ স্কোরকার্ডে। কে বলতে পারে, এই বদলটাই বাঁচিয়ে রাখবে কি না স্মিথের ভেতরের ক্রিকেটকে।

nnnn

কিছু ক্ষোভের বিষবাষ্প অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে দাঁড়ালেই। গ্রিনের রেকর্ড যদিও নির্বাচনী বৈঠকে ওঠা ক্যামেরন ব্যানক্রফটের চেয়ে ভালো, ভারতে নয় টেস্ট আগে সেঞ্চুরিও করে এসেছেন, তবুও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটেই একটা মহল চাইছে তাকে ব্যর্থ হতে দেখতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের ছবিটাই দেখুন, অস্ট্রেলিয়া ৫০ রান তোলার আগেই হারিয়ে ফেলেছে ২ উইকেট, ভরসা হয়ে স্মিথ নেই, গ্রিন এর মধ্যে নামছেন ব্যাটে – কতটা পাহাড়প্রমাণ চাপ হয়ে হাজির হলো মুহূর্তটা তার জন্যে। এই ছবিটাই যদি এখন থেকে হয়ে যায় রোজকার ঘটনা?

nnnn

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট-ভক্তরা নিশ্চয়ই শাপশাপান্তই করছেন লেখককে। এমন অলক্ষুণে সব ছবি আগ বাড়িয়ে আঁকতে বলেছে নাকি কেউ! এমনিতেই তো স্মিথ টেস্ট ওপেনার, ছবিটা চোখের সামনে বাস্তব হয়ে যাওয়াটাই হজম করতে কষ্ট হওয়ার কথা তাদের।

n

dailycrunch.net

dailycrunch.net

Articles: 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *