রন্ডো: ফুটবল ট্রেনিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ

n

n

“ফুটবলে আপনার যা যা দরকার, তার সবই রয়েছে রন্ডোতে।”

n-ইয়োহান ক্রুইফ

nnnn

সময়ের চেয়ে ইয়োহান ক্রুইফ কতটা এগিয়ে ছিলেন, সেটা আর নতুন করে না বললেও চলে। ১৯৮৮ সালে বার্সেলোনার কোচ হয়ে আসার পরে কাতালান ক্লাবটার অনুশীলনে রন্ডোর ব্যবহার শুরু করেন সর্বকালের এই অন্যতম ক্ষুরধার ফুটবল-মস্তিষ্ক। প্রথমে ট্রেনিং, পরবর্তীতে ম্যাচ-পূর্ববর্তী রুটিনেও রন্ডোকে যুক্ত করেন ক্রুইফ। ধীরে ধীরে কাতালান ক্লাবটির পরিচয়ের সাথে মিশে যেতে থাকে রন্ডো, পরবর্তীতে গার্দিওলা-জাভিও হেঁটেছেন সেই পথে।

nnn

n

বার্সার অনুশীলনে রন্ডোর ব্যবহার; Image Source: Twitter/FC Barcelona

nnn

রন্ডো কী?

nnnn

রন্ডোকে একটা মিনি ফুটবল ম্যাচের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। খেলোয়াড়রা এক্ষেত্রে বৃত্তাকারে দাঁড়ান এবং একে অপরের মাঝে পাসিং করেন। বৃত্তের মাঝে দাঁড়ান এক বা একাধিক ডিফেন্ডার, যারা চেষ্টা করেন অপর খেলোয়াড়দের পা থেকে বল কেড়ে নিতে। যে ডিফেন্ডার বল কেড়ে নিতে, বা ট্যাকেল অথবা ইন্টারসেপ্ট করতে সক্ষম হন, তিনি ঐ অ্যাটাকারের সাথে জায়গা বদল করেন। অর্থাৎ এরপর পূর্বের অ্যাটাকার নেন ডিফেন্ডারের ভূমিকা, চেষ্টা করেন পাসিংয়ে বাধা দিতে। এভাবেই খেলাটা চলতে থাকে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে।

nnnn

ঠিক কতজন খেলোয়াড় রন্ডোতে অংশ নিতে পারবে, তার কোনো গৎবাঁধা নিয়ম নেই। নেই অ্যাটাকার এবং ডিফেন্ডারদের সংখ্যার কোনো নির্দিষ্ট অনুপাতও। একটাই অলিখিত নিয়ম রয়েছে, ডিফেন্ডারের সংখ্যা যেন অ্যাটাকারদের চেয়ে বেশি না হয়ে যায়।

nnn

n

Image Source: FC Barcelona

nnn

অ্যাটাকার-ডিফেন্ডারদের সংখ্যা, একজন অ্যাটাকার প্রতি পাসের ক্ষেত্রে বলে কয়টা স্পর্শ করতে পারবেন, এই ব্যাপারগুলো নির্ধারণ করে দেন কোচরাই। চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রেনিংয়ে সাধারণত ওয়ান টাচ পাসিংকেই আদর্শ ধরে নেওয়া হয়, আর বৃত্তের ব্যাসার্ধ কমিয়ে অ্যাটাকারদের ওপর চাপ বাড়ানো হয়।

nnnn

একজন খেলোয়াড়ের পাসিং, ভিশন, কন্ট্রোল, কম্বিনেশন, এই ব্যাপারগুলোতে উন্নতি আনতে রন্ডোর জুড়ি মেলা ভার। কোচের নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বলে বেশিবার স্পর্শ করতে পারেন না অ্যাটাকাররা। ডিফেন্ডাররাও দ্রুত ট্যাকেল বা ইন্টারসেপ্ট করে বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, ম্যাচে যেটা ইতিবাচক প্রভাব রাখে।

nnnn

কেন রন্ডো ব্যবহার করা হয়?

nnnn

রন্ডোর আয়োজন করা যতটা সহজ, এর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। রন্ডোর ইন্টেনসিটি থেকে শুরু করে এর মাঝের ছোট্ট বিরতি, প্রতিটা বিষয়ই ম্যাচের জন্য খুবই কার্যকরী অনুশীলন।

nnnn

যেহেতু খেলোয়াড়দের বৃত্তটা খুব বেশি বড় হয় না, বৃত্তের ওপর দাঁড়ানো খেলোয়াড়দের খুব বেশি মুভমেন্টও থাকে না, তাই রন্ডোকে খুব ভালো ওয়ার্ম-আপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বৃত্তের ব্যাসার্ধ যদি আরো বড় করা হয়, অ্যাটাকার-ডিফেন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে রন্ডো আরো বেশি উপভোগ্য, উত্তেজনাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে দলের মূল অনুশীলনের অংশও হয়ে ওঠে রন্ডো, আবার ইন্টেনসিটি কমিয়ে একে ব্যবহার করা যেতে পারে ট্রেনিং-পরবর্তী কুল-ডাউন হিসেবে।

nnn

n

রিয়াল মাদ্রিদের অনুশীলনে রন্ডো; Image Source: Fotografie od katatonia82

nnn

রন্ডোর মূল ব্যাপারটাই হলো আনন্দের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের প্রতিযোগিতার মনোভাব বাড়ানো, একই সাথে পায়ে বল রাখা এবং বল কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট নিশ্চিত করা। রন্ডো খেলোয়াড়দের জয়ী হওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলে, খেলার গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে উৎসাহিত করে। এ কারণেই কোচেরা রন্ডোর গতি বাড়িয়ে ব্যাপারটাকে একই সাথে উপভোগ্য এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার প্রতি জোর দেন।

nnnn

রন্ডো কত প্রকার ও কী কী?

nnnn

আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, রন্ডোর কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। সাধারণত পাঁচ থেকে আটজন অ্যাটাকার এবং দুইজন ডিফেন্ডার নিয়েই রন্ডো আয়োজন করা হয়। বৃত্তাকারে দাঁড়ানো অ্যাটাকাররা একে অপরের থেকে কয়েক ফুট দূরে অবস্থান করে। তবে ম্যানেজাররা চাইলে আরো বড় রন্ডো আয়োজন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে বৃত্তের ব্যাসার্ধ হয় দশ-বারো মিটার, আর তাতে অংশ নেয় পুরো স্কোয়াড। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে ডিফেন্ডারের সংখ্যাও।

nnn

n

Image Source: The Coaches’ Voice

nnn

চাইলে এক্ষেত্রে আরো কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। ওপরের ছবির মতো বৃত্তের মাঝে এক বা একাধিক অ্যাটাকারকে রাখা যেতে পারে, তাতে অনুশীলনটাও যাবে পরবর্তী ধাপে। আবার চাইলে কয়েকজন ‘ফ্লোটিং’ খেলোয়াড়কে রাখা যেতে পারে, যেরা কেবল অ্যাটাকিং দলের হয়েই খেলবে।

nnn

n

Image Source: The Coaches’ Voice

nnn

রন্ডোর সুবিধা

nnnn

প্রথমত, রন্ডোরে একজন খেলোয়াড়কে অনেকবার বলে স্পর্শ করতে হয়, আর প্রতিবার বলের সাথে অ্যাটাকারদের কাছে আসে চাপও। অনুশীলনের এই চাপই খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করে ম্যাচের জন্য। ম্যাচেও প্রতিপক্ষের চাপের মুখে এক স্পর্শে পাস দেওয়ার জন্য তৈরি হন খেলোয়াড়রা।

nnn

n

অনুশীলনে নিয়মিত রন্ডো ব্যবহার করেন পেপ গার্দিওলা; Image Source: Getty Images

nnn

পাশাপাশি বারবার দ্রুতগতির পাস দেওয়া এবং গ্রহণ করতে করতে ব্যাপারটা মগজে গেঁথে যায় খেলোয়াড়দের, ফলে মাঠেও এর প্রয়োগ আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

nnnn

রন্ডোর অসুবিধা

nnnn

অনুশীলনের অত্যন্ত জনপ্রিয় অংশ হলেও রন্ডোর বেশ কিছু কুফলও রয়েছে। প্রথমত, পূর্ণাঙ্গ ম্যাচের অনেকগুলো উপাদানই থাকে না রন্ডোতে। ম্যাচে যেমন একটা নির্দিষ্ট দিকে আক্রমণ করতে হয় খেলোয়াড়দের, রন্ডোতে তেমনটা নয়। তাছাড়া রন্ডোতে বল পায়ে রাখার জন্যই পাসিং করা হয়, গোলের উদ্দেশ্যে আক্রমণ তাতে অনুপস্থিত।

nnnn

ডিফেন্ডারদের ক্ষেত্রে রন্ডো কেবলই দ্রুত প্রেস করে ট্যাকেল করার মাধ্যম। কিন্তু ম্যাচের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে যেমন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া লাগে, প্রেস করা আর না করার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা লাগে, রন্ডোতে তা অনুপস্থিত।

nnnn

রন্ডো ব্যবহারে বিখ্যাত কারা?

nnnn

ইয়োহান ক্রুইফ তো বটেই, তার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত পেপ গার্দিওলাও দলের অনুশীলনে নিয়মিত রন্ডো ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিটি রন্ডোতে ৬ থেকে ৮ জন খেলোয়াড় থাকেন বৃত্তের ওপর, বৃত্তের ভেতরে থাকেন দুইজন। এই ব্যাপারে গার্দিওলার ধারণা খুব পরিষ্কার, কাছাকাছি থাকা অ্যাটাকাররা নিজেদের মধ্যে পাসিং করে ডিফেন্ডারদের টেনে আনবেন, এরপর পাস করে দেবেন দূরে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থের কাছে। এই রন্ডোর মাধ্যমেই গার্দিওলা তার খেলার মৌলিক বিষয়গুলো গেঁথে দেন শিষ্যদের মাথায়।

nnn

n

আনচেলত্তির রন্ডো অনুশীলনকে আনন্দময় করে; Image Source: Getty Images

nnn

কার্লো আনচেলত্তিও তার অনুশীলনের শুরু আর শেষে রন্ডো ব্যবহার করেন, যদিও সেটা মূলত অনুশীলনকে আরেকটু উপভোগ্য আর আনন্দময় করার উদ্দেশ্যেই। বৃত্তের ওপরে পাঁচ-ছয়জন আর ভেতরে দুইজনকে রেখে চলে তার রন্ডো। সংখ্যায় কম হওয়ায় অ্যাটাকাররা বলে বেশি স্পর্শ পান, একই কারণে অ্যাটাকার আর ডিফেন্ডারদের ভূমিকাও পরিবর্তিত হয় দ্রুত। ডিফেন্ডারদের বেশিক্ষণ বৃত্তের মাঝে অবস্থান করা লাগে না।

nnnn

আর্নেস্তো ভালভার্দে আবার তার রন্ডোকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেন। পুরো স্কোয়াডকে তিনভাগে ভাগ করে তিনটা পৃথক রন্ডো চালান তিনি। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই রন্ডোগুলোতে জুটি বেঁধে ডিফেন্ডারদের ব্যবহার করেন তিনি, গুরুত্ব দেন দলীয় সমন্বয়ের ওপর। হাই ইন্টেনসিটির এই রন্ডোর সুফল স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচে পান তিনি।

nnnn

তবে সব কোচের ক্ষেত্রে রন্ডোর প্রয়োগ যেমন একই নয়, তেমনি সব কোচ রন্ডো থেকে সমান সুফলও পান না। রন্ডোর প্রয়োগ নির্ভর করে কোচের খেলানোর ধরন, ফরমেশন, খেলোয়াড়দের দক্ষতা আর সক্ষমতার ওপর।

n

dailycrunch.net

dailycrunch.net

Articles: 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *