n
জুলাই ৩০, ১৯৮৫। কানাডার টরন্টো শহর।
nnnn
বিশতলা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বাসিন্দা নিকোল মরিন (Nicole Morin) মাকে বিদায় বলেছে মাত্র। নিচে অপেক্ষা করছে তার খেলার সাথী। দুজনে মিলে সাঁতার কাটবে বিল্ডিংয়ের সুইমিং পুলে। ইন্টারকমে বান্ধবীকে অপেক্ষা করতে বলে দরজা খুলে বের হয়ে গেল নিকোল। লিফটে চড়ে মিনিটখানেকেরও কম সময়ে বান্ধবীর কাছে পৌঁছে যাবে সে। চার ফুট লম্বা, বাদামী চোখ আর চুলের মিষ্টি মেয়েটি সবার কাছেই আদরের, বিপদের কোনো আশঙ্কা আছে কি?
nnnn
৮ বছরের নিকোল মরিনকে আর কখনও দেখা যায়নি।
nnnn
রহস্যময় অন্তর্ধান
nnnn
১৯৭৭ সালের পয়লা এপ্রিল কানাডায় জন্ম নিকোলের, মা জ্যানেট (Jeanette) আর বাবা আর্থার মরিনের (Arthur Morin) ঘরে। নিজেদের মধ্যে বনিবনার অভাবে ১৯৮৫ সালে আলাদা থাকছিলেন তারা। নিকোল রয়ে যান মায়ের সাথে।অশুভ সেই দিনে বান্ধবী জেনিফারের সাথে সাঁতার কাটার পরিকল্পনা করেছিল নিকোল। বাসার পেছনের সুইমিং পুলে বাচ্চাদের আলাদা প্রশিক্ষক থাকেন সবসময়, সুতরাং কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সাড়ে দশটার সময় চিঠিপত্র আনার জন্য একবারে নিচ থেকে ঘুরেও আসে মেয়েটি।
nnn
nnn
নিকোলের মা অ্যাপার্টমেন্টে ছোট বাচ্চাদের ডে-কেয়ার চালান। ১১.১৫-তে জেনিফার ইন্টারকমে যোগাযোগ করে তার সাথে, নিকোল এখনো আসছে না কেন? জ্যানেট মনে করলেন তার মেয়ে সম্ভবত একাই পুলে চলে গেছে। হয়তো অন্য বাচ্চাদেরে সাথে খেলতে খেলতে ভুলে গেছে বান্ধবীর কথা। জেনিফারকে সেই কথাই বললেন তিনি। বিকাল তিনটার আগে জ্যানেট বুঝতেই পারেননি কী সর্বনাশ ঘটে গেছে।
nnnn
পুলিশি অভিযান
nnnn
খবর পেয়ে দ্রুত অকুস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। আশপাশের এলাকায় রোডব্লক বসিয়ে ঘিরে ফেলা হয় চারদিক। ৪২৯টি অ্যাপার্টমেন্টের প্রত্যেকটিতে তল্লাশি চালায় তারা। কেউ বাসায় না থাকলে তালা খুলে ভেতরে ঢোকেন অফিসাররা। অ্যাপার্টমেন্টের এক বাসিন্দা মেয়েটিকে লিফটে ঢুকতে দেখেছিলেন। পুলিশ ধারণা করল সেখান থেকে লবি- এর মধ্যে কোথাও কিছু হয়েছে নিকোলের। পরদিন বিশাল বাহিনী মাঠে নামানো হয়। পায়ে হেঁটে আর ঘোড়ায় চেপে খুঁজতে থাকে পুলিশ। আকাশে চক্কর দিতে থাকে চপার, লেকে নামানো হয় বোট। প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করা হয় বিল্ডিংয়ের প্রতিটি অংশ।
nnn
nnn
দুটো বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় গোয়েন্দাদের। প্রথমত, নিকোল ঠিক কোন জায়গা থেকে অদৃশ্য হয়েছে বুঝতে পারছিলেন না তারা। লিফট আর লবি এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোথাও থেকে, কিন্তু কোথায়? দ্বিতীয় সমস্যা পর্যাপ্ত সূত্রের অভাব, কারণ বিল্ডিংয়ে সিসি ক্যামেরা নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেদিন নিকোল হারিয়ে যায় ঠিক তার পরদিনই ক্যামেরা লাগানোর কথা ছিল। ফলে সন্দেহভাজন বের করতে হিমশিম খেতে থাকে পুলিশ। ডিটেকটিভ স্টেলা কারাসের (Stella Karras) মতে, নিকোলের অন্তর্ধান সম্পর্কে আসলে তেমন কিছুই জানতে পারেননি তারা। মানুষ গিজগিজ করছে এমন একটা বিল্ডিং থেকে সবার নজর এড়িয়ে কীভাবে উধাও হয়ে গেল মেয়েটি সেটা রহস্যই রয়ে গেছে।
nnnn
চলমান তদন্ত
nnnn
বেশ কিছু তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকে পুলিশ। অপহরণ স্বভাবতই তালিকায় প্রথম। এজন্য সবার আগে সন্দেহ পড়ে নিকোলের বাবা বা চাচার ওপর। কিন্তু দুজনেই ঘটনার সময় অন্য জায়গায় ছিল। শিশু নির্যাতনকারী কোনো অপরাধী মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেছে এমনটাও প্রস্তাব করে কেউ কেউ। নিকোল নিজেই বাড়ি ছেড়েছে এই ধারণা নিয়েও তদন্ত হয়। বলাই বাহুল্য, কোনোটিই প্রমাণিত হয়নি।
nnnn
প্রায় দশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ক্রাইমস্টপার (Crimestoppers) ইউনিট নিকোলের ব্যাপারে তথ্যের জন্য এক হাজার ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করে। পুলিশ, মিডিয়া এবং সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত এই সংগঠন মেয়েটির অন্তর্ধান বিষয়ে একটি ভিডিও বানায়। সেটা মিডিয়াতে প্রচার করা হয় ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই। এরপর পুলিশ পুরষ্কারের অর্থ বাড়িয়ে এক লাখ করে দেয়, এখনও বলবৎ আছে সেটা।
nnn
nnn
বলা হয়, প্রায় ২৫,০০০ ঘন্টা নিকোলের জন্য বরাদ্দ করেছিল পুলিশ, খরচ করে প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার। ৬,০০০ লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। ২০ জনের একটি টাস্ক ফোর্স প্রায় নয় মাস টানা লেগে থাকে এই কেসের পেছনে। হারিয়ে যাওয়া শিশু উদ্ধারে টরন্টোর ইতিহাসে এটাই ছিল সর্ববৃহৎ প্রচেষ্টা। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবেশ করে কানাডার গোয়েন্দারা। বিশ বছরের নিকোলের আনুমানিক একটি চেহারা ২০০১ সালে পাঠানো হয় পৃথিবীর সতেরটি দেশে, যদি কোথাও থেকে কোনো সূত্র মিলে যায়। কিন্তু কোনো সফলতা আসেনি।
nnnn
১৯৮৮ সালে মার্কিন এক অপরাধী লাভি রিডল (Lovie Riddle) দাবি করে, ত্রিশের বেশি অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত সে। নিকোলও নাকি তাদের একজন। মেয়েটাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে আরেকজনের হাতে তুলে দিয়েছিল সে, সেই লোক সম্ভবত তাকে মেরে ফেলেছে। তবে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার গল্পের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
nnn
nnn
ক্যালভিন হুভার
nnnn
নিকোলের ঠিক দশ মাস আগে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নয় বছরের ক্রিস্টিন জেসোপকে (Christine Jessop )। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে নিজের বাসা থেকে অপহৃত হয় সে। ছয় মাস পর নির্জন এক মাঠে পাওয়া যায় জেসোপের ধর্ষিত এবং ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ। ২০২০ সালে ক্যালভিন হুভার (Calvin Hoover) নামে এক ব্যক্তিকে এই অপরাধের জন্য দায়ী করে পুলিশ। তবে ২০১৫ সালে হুভার আত্মহত্যা করায় তার থেকে কোনো তথ্য বের করার উপায় ছিল না।
nnn
nnn
হুভারকে সন্দেহ করার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল পুলিশের। দুটি মেয়েরই বয়স কাছাকাছি, তার একে অপরের থেকে খুব বেশি দূরে থাকত না, এবং দুজনের ক্ষেত্রেই সূত্র বলতে কিছুই ছিল না তাদের হাতে। আরেকটি বড় সূত্র ছিল ঘটনার সময় হুভার থাকত দুই জনের বাসার মাঝামাঝি। এবং ফোন কোম্পানির হয়ে কাজ করায় তাকে সবসময় ছুটোছুটির ওপর থাকতে হত।
nnnn
নতুন সূত্র
nnnn
২০২০ সালে এক মহিলা পুলিশকে নতুন তথ্য দেন। ১৯৮৫ সালে তার বয়স ছিল বার। সেসময় এক লোকের হাত ধরে নিকোলকে একটা পার্কের দিকে যেতে দেখেছিলেন তিনি। এর বাইরেও নানা উৎস থেকে বেশ কিছু তথ্য পায় তারা। সেই অনুযায়ী কয়েকটি জায়গায় চালানো হয় তল্লাশি। মৃতদেহ খুঁজে বের করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে চষে ফেলা হয় সেখানে। তবে মেলেনি নিকোলের খোঁজ।
nnnn
নিকোল মরিনের অন্তর্ধান নিয়ে পুলিশের তৎপরতা কিন্তু বন্ধ হয়নি। তার মা মারা গেছেন, কিন্তু বাবা এখনও ধৈর্য ধরে আছেন মেয়ে একদিন ফিরে আসবে সেই আশায়। ২০২০ সালে চল্লিশ বছরের নিকোলের আনুমানিক চেহারা কেমন হতে পারে সেটা প্রকাশ করে পুলিশ। জনগণের কাছে নতুন করে আবেদন জানানো হয় তথ্যের জন্য।
n