ইংল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রার শেষ এখানেই? | প্রথম পর্ব

n

২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, পরের বছরে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে চার বলে চার ছক্কা হজম করে অবিশ্বাস্য পরাজয়। ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে এবার চলে আসা যাক বর্তমানে, আরো একটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে সাদা বলের দুটো ফরম্যাটের বিশ্বসেরার মুকুটটাই শোভা পাচ্ছিলো ইংরেজদের মাথায়। ২০১৯-এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো ২০২২ এর টি-২০ বিশ্বকাপটাও গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ঘরে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই দলটাই কিনা অপ্রত্যাশিতভাবে বাদ পড়ে গেল সেমিফাইনালের আগেই, হয়তো তিন সিংহের স্বপ্নযাত্রার শেষও এখানেই। কী ছিল ইংল্যান্ডের এই স্বপ্নযাত্রার বাঁকে বাঁকে, এই রূপকথার আদ্যোপান্ত, দ্য ক্রিকেট মান্থলির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে সবই।

nnnn

২০১৫তে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া দলটা যখন চার বছর পর বিশ্বকাপটাই জিতে নিলো, শুধু বিশ্বকাপকেই অনুসরণ করা ক্রিকেটভক্তদের জন্য সেটা এসেছিল বিস্ময় হয়ে, কিন্তু ক্রিকেটভক্তদের বিস্ময়ের পরিমাণ আরো বাড়বে, যখন জানবেন যে লর্ডসে শিরোপা উঁচিয়ে একাদশটা এরপর আর কখনোই খেলেনি একসাথে। সাদা চোখে ব্যাপারটাকে ইংল্যান্ডের ‘নতুন যুগের সূচনা’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বেন স্টোকস যখন আবার ফিরে আসেন তেরো মাসের অবসর ভেঙে, এর অর্থ একটাই। ২০১৯-এর বিশ্বজয়ী দলের ভিত্তিটা ঠিক রেখেই ২০২৩-এর বিশ্বকাপে নামতে চেয়েছিল ইংল্যান্ড।

nnn

n

Image Source: Getty Images

nnn

তবে ২০২৩-এর দলের আলোচনাটা পরে আসবে, আপাতত আসা যাক ইংল্যান্ডের ‘১৫ থেকে ’১৯ এর ওই স্বপ্নযাত্রার আলোচনায়।

nnnn

কী কী ছিল ঐ স্বপ্নযাত্রায়?

nnnn

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

nnnn

ঐতিহাসিকভাবে, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে একটা প্রথা চালু ছিল। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের শীতকালীন দীর্ঘ সফরের শেষটা হতো বিশ্বকাপ দিয়ে। ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ খেলে ক্লান্ত ইংল্যান্ড গেছে যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে।

nnnn

২০১৫ সালে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এর যৌথ আগ্রহে অ্যাশেজের সূচি পুননির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তাতেও ইংল্যান্ডের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি। অ্যালিস্টার কুককে স্বল্প সময়ের নোটিশে অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে দল হেরে যায় ৫-২ ব্যবধানে, তিন নম্বরে খেলতে নেমে আলো ছড়াতে থাকা জেমস টেলরকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ছয়ে, তিনে ফেরানো হয় গ্যারি ব্যালান্সকে, নতুন বলে সাফল্য পেতে থাকা ক্রিস ওকসকে রূপান্তরিত করা হয় প্রথম চেঞ্জ বোলার হিসেবে। ফলাফল, বিশ্বকাপে ভরাডুবি, গ্রুপের টেস্টখেলুড়ে চার দেশের কাছেই পরাজয়।

nnnn

বিশ্বকাপের পরে, ’১৫ এর মে মাসে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যেন এই ভুল আর না ঘটে। স্ট্রাউস জানতেন, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ওয়ানডে ক্রিকেটের মর্যাদা টেস্টের মতো সর্বোচ্চ পর্যায়ের না হতে পারে, কিন্তু তাতেও ইংল্যান্ডের ‘মান্ধাতার আমলের’ খেলার ধরণ আর মাঠের বাজের ফলাফলকে সমর্থন করা যায় না।

nnn

n

অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস; Image Source: Getty Images

nnn

স্ট্রাউস তাই ওয়ানডে আর টেস্টের জন্য আলাদা খেলোয়াড় আর খেলার ধরণ ঠিক করার দিকে গুরুত্ব দিলেন। কোচের দায়িত্ব থেকে পিটার মুরকে অব্যাহতি দেওয়া হলো, নতুন কোচ করা হলো ট্রেভর বেলিসকে। ইয়োন মরগানকে অবশ্য অধিনায়কের পদ থেকে সরানো হলো না, তাকে রেখেই সাজানো শুরু হলো ’১৯ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা।

nnnn

n

“আমাদের পরিকল্পনা শুধু পরবর্তী সিরিজেই সীমাবদ্ধ ছিল না, আমরা পরিকল্পনা করতাম পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য। প্রশ্ন ছিল, আমরা যে খেলোয়াড়কে নির্বাচন করছি, তিনি আমাদের বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় আছেন কিনা, আমাদের খেলার ধরনের সাথে তিনি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। যদি উত্তরটা না হয়, তাহলে ঐ খেলোয়াড়কে দলে নেওয়া হতো না।”

n-নাথান লিমন, বিশ্লেষক, ইংল্যান্ড

nnnn

লিমনের এই গবেষণা থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, নির্ধারণ করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ সাফল্যের সম্ভাব্য গতিপথ। তিনটা বিষয়কে মূলত পাখির চোখ করেছিলেন স্ট্রাউস: জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা, বোলিংয়ের তুলনায় ব্যাটিংয়ের শক্তি বৃদ্ধির দিকে বাড়তি গুরুত্বারোপ, এবং অভিজ্ঞতা।

nnnn

n

“বিশ্বকাপের আগে আমরা ৯০-৯৫টা ওয়ানডে ম্যাচ পাবো। এই ম্যাচগুলোতে আমাদের তরুণদের যত বেশি সুযোগ দিতে পারবো, তারা তত বেশি অভিজ্ঞ হবে, তত বেশি ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স দিতে পারবে।”

n-ইয়োন মরগান, অধিনায়ক, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল

nnnn

ঝুঁকি এবং সফলতা

nnnn

২০১৫ এর আগ পর্যন্ত সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড পিছিয়ে ছিল যোজন যোজন দূরত্বে। ঐ বিশ্বকাপেই, চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া যেখানে রান তুলেছিল ওভারে ৬.৮২ হারে, ইংল্যান্ড তুলেছিল ৫.৪৮ করে। পুরো টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড ছক্কা হাঁকিয়েছিল ১৮টা, শুধুমাত্র স্কটল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতই এর চেয়ে দল হিসেবে কম ছক্কা পেয়েছিল। তুলনার স্বার্থে বলে রাখা যায়, ক্রিস গেইল একাই ছক্কা মেরেছিলেন ২৬টা।

nnnn

বিশ্বকাপের পরে ইংল্যান্ডের নতুন ওয়ানডে-চক্র শুরুর আগে, এজবাস্টনে মরগান তার তরুণ দলটাকে একত্র করেন, এবং খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন যে তাদের কাছ থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটটাই তিনি প্রত্যাশা করছেন। এই আলোচনার ফলাফলটা হাতে হাতে পাওয়া যায়, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথমবারের মতো দলীয় ৪০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করে ইংল্যান্ড। ঐ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন জো রুট এবং জস বাটলার। পুরো সিরিজেই ওভারপ্রতি ৭.৬৮ রান রেটে ব্যাট করে ইংল্যান্ড, সিরিজটা জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে।

nnn

n

জেসন রয়; Image Source: Getty Images

nnn

খেলোয়াড় নির্বাচনেও ধারাবাহিকতা ও সমন্বয় নিয়ে আসা হয়। নিউ জিল্যান্ড সিরিজের আগেই আলেক্স হেলস ও জেসন রয়কে পুরো বছর সুযোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। একই সাথে দু’জনকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের লাইসেন্স দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঐ বছরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে পাকিস্তানের মাটিতে দু’জনই নিজেদের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পেয়ে যান।

nnnn

ইয়োন মরগান নিশ্চিত করেন, যেন আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে আউট হলে তার দলের কোনো ব্যাটসম্যানকে সমালোচনা করা না হয়। পথ দেখানোর কাজটা তিনি নিজেই করেন, ‘১৫ এর গ্রীষ্মের সব হোম সিরিজ মিলিয়ে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১১০। ‘ধীরে চলো’ নীতিকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে তিনি বেছে নেন মারকাটারি ব্যাটিংয়ের ধাঁচটা। নিউ জিল্যান্ডের সাথে ঐ সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই স্লগ সুইপ করে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন, তবুও তার উদ্দেশ্যটা বোঝা কঠিন ছিল না একেবারেই।

nnnn

মরগানের দলের মানসিকতা থেকে এটা নিশ্চিত হয়ে যায়, যে ইংল্যান্ড দল বেরিয়ে আসছে আগের ধীরগতির ক্রিকেট থেকে। ‘১৫ বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে, ইনিংসের দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিড অফে ধরা পড়ে আউট হন মঈন আলী, দলের রান তখন ১ উইকেট হারিয়ে ৬২। সাজঘরে ফিরে বেশ কথা শুনতে হয়েছিল মঈনকে, কেননা টিম ম্যানেজমেন্টের গড়ে দেওয়া ছাঁচ অনুসারে, দশ ওভার শেষে দলের রান হওয়ার কথা বিনা উইকেটে পঞ্চাশ। মঈন আলী বারোটা রান বেশি এনে দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ‘অপ্রয়োজনীয়’ ঝুঁকি নিয়ে হারিয়েছিলেন নিজের মূল্যবান উইকেটটা।

nnnn

বিশ্বকাপ-পরবর্তী ‘নতুন ইংল্যান্ড’ দলেও একইভাবে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছিলেন মঈন আলী। কিন্তু এক্ষেত্রে দলের মনোভাব ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

nnn

n

মঈন আলী; Image Source: Getty Images

nnn

n

“সাজঘরে ফিরে আমি বলেছিলাম, ‘আমার এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হয়নি। মাটিতে বল রেখে ঝুঁকিহীন ক্রিকেটটা খেলাই হয়তো আমার উচিত ছিল।’ মরগান তখন এর প্রতিবাদ করেন, ‘না। তুমি ঠিকই ছিলে। পরেরবার বলটাকে সীমানার ওপারে পাঠানোর চেষ্টা করো।’ এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার ছিল।”

n-মঈন আলী, অলরাউন্ডার, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল

nnnn

শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না ইংল্যান্ড, ট্রেনিংয়েও এই বিষয়টার প্রয়োগ শুরু হয় তখন থেকেই।

nnnn

আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে গেলে পাশাপাশি থাকে ব্যাটিং ধ্বসের শঙ্কাটাও। ইংল্যান্ড দল তাই ব্যাটিং অর্ডার লম্বা করার পরিকল্পনা করে, আদিল রশিদ, ডেভিড উইলি, লিয়াম প্লাঙ্কেট, ক্রিস জর্ডান, ক্রিস ওকসরা নিয়মিত সুযোগ পেতে থাকেন দলে। এরা প্রত্যেকেই বোলার হলেও সামর্থ্য রয়েছে ব্যাট হাতে দলকে কিছু রান এনে দেওয়ার। ঐ নিউ জিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচেই রশিদ ব্যাট হাতে করেছিলেন ৬৯ রান। এই ‘ব্যাটিং জানা’ বোলারদের কারণেই মূল ব্যাটসম্যানরা আরো বেশি ঝুঁকি নেওয়ার সাহস করতেন। অর্থাৎ, কোনো বল মোকাবেলা না করেই ব্যাট হাতে দলের জন্য ভূমিকা রাখতেন ইংরেজ বোলাররা।

nnnn

বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গণ করা

nnnn

বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো দল ঘোষণার আগে বৈঠকে বসে কোচ ট্রেভর বেলিস এবং সহকারী কোচ পল ফারব্রেস। ঐ বৈঠকেই বোলিং বৈচিত্র্যের ওপর বাড়তি গুরুত্বারোপ করেন বেলিস। বিশেষ করে দুজন বোলারের কথা বলেন তিনি, একজন স্পিনার যিনি দুদিকেই বল ঘোরাতে পারেন, এবং একজন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার।

nnnn

স্পিনার হিসেবে এরপরই ছয় বছর পরে দলে ফেরানো হয় লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে। আর শুধু ফিরলেন না, ফিরলেন অধিনায়ক ইয়োন মরগানের বিশ্বাসকে সাথে নিয়েই। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টানা সুযোগ পেয়েছেন আদিল রশিদ, এ সময়ে পুরো ক্রিকেটবিশ্বেই রশিদের সমান ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি কেউ।

nnn

n

Image Source: ESPN Cricinfo

nnn

ইতিপূর্বে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলা স্পিনারদের প্রায় সবাই ছিলেন মূলত রক্ষণাত্মক ধাঁচের বোলার। সেই ধারাটা ভাঙেন রশিদ, রান আটকানোর চাপের বদলে তাকে দেওয়া হয় উইকেট গ্রহণের স্বাধীনতা।

nnnn

n

“আমরা চেয়েছিলাম রশিদের ওপর থেকে রান আটকানোর চাপ সরিয়ে নিতে, বলেছিলাম সে কত রান দিচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা কেউই মাথা ঘামাবো না। আমরা শুধু তার কাছে উইকেট চেয়েছি।”

n-পল ফারব্রেস, সাবেক সহকারী কোচ, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল

nnnn

উইকেট নেওয়ার কাজটা রশিদ খুব ভালোভাবেই করেছিলেন, ইংল্যান্ড জাতীয় দলে নিজের জায়গাটাও পাকা করে নিয়েছিলেন সাথে সাথে।

nnnn

উন্নতিটা এসেছিল ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণেও, আগের চেয়ে। জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছেঁটে ফেলা হলো সীমিত ওভারের পরিকল্পনা থেকে, যদিও ব্রড পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা মাত্র সিরিজের জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন। আর এই সিদ্ধান্তটা মোটাদাগে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে এগিয়ে দিয়েছিল অনেকটা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের জন্য দু’জনকে সংরক্ষণ করেছে ইংল্যান্ড, ওদিকে রঙিন পোশাকে খেলেছেন বৈচিত্র্যপূর্ণ দক্ষতার তরুণরা।

nnn

n

ডেভিড উইলি; Image Source: Getty Images

nnn

মার্ক উডের শক্তির জায়গা তার গতি, ক্রস সিমে বল করার সাথে সাথে মাঝের ওভারের বোলিংয়ে লিয়াম প্লাঙ্কেট অনন্য, ডেভিড উইলি আবার নতুন বলটাকে সুইং করাতে পারেন। এরা প্রত্যেকেই ‘১৫ থেকে ‘১৯-এর মাঝের চক্রে খেলেছেন। বিশ্বকাপের আগে আগে জফরা আর্চার নিয়ে নেন ডেভিড উইলির জায়গাটা।

nnnn

২০১১ থেকে ২০১৫, এই চক্রে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের মাত্র ৪ শতাংশ করেছিলেন বাঁহাতি পেসার, রিস্ট স্পিনার আর ঘণ্টায় ৯০ মাইলের ওপরে বল করতে পারা পেসাররা। ‘১৫ থেকে ‘১৯-এর চক্রে এই বোলাররাই করেছিলেন ৩০ শতাংশ বল। ক্রিস ওকসের বোলিংটাও আরো বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে এই সময়ে।

nnn

n

আদিল রশিদ এবং ইয়োন মরগান; Image Source: Reuters

nnn

শুধু মাঠের ক্রিকেট নয়, মাঠের বাইরেও বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গণ করে নিতে শুরু করে ইংল্যান্ড। জাত ইংরেজদের বদলে ইংল্যান্ড দলে সুযোগ পেতে থাকেন বিভিন্ন দেশে বংশোদ্ভূত ক্রিকেটাররা।

nnnn

n

“আমাদের দলে একটা দারুণ ভ্রাতৃত্ব ছিল। আমরা জানতাম, আমাদের সামনে চমৎকার কিছু অপেক্ষা করছে। কে দলে নতুন, কে পুরনো, অভিজ্ঞ নাকি অনভিজ্ঞ, গায়ের রঙ সাদা, কালো নাকি বাদামি, এগুলোর কোনো গুরুত্বই ছিল না আমাদের কাছে।”

n-মঈন আলী, অলরাউন্ডার, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল

nnnn

২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের পরে ইয়োন মরগান বলেন,

nnnn

n

“আমি আদিলের সাথে কথা বলেছিলাম, ও বলছিল, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। ওর এই বিশ্বাস দেখে আমি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমাদের সাথে সৌভাগ্য রয়েছে। সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য, এই ভিন্নতাই আমাদের দলকে অন্য একটা মাত্রা দিয়েছে।”

n-ইয়োন মরগান, সাবেক অধিনায়ক, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল

nnnn

আক্রমণাত্মক এবং কৌশলী

nnnn

সময়ের সাথে সাথে ইংল্যান্ডের খেলার ধরনে এসেছে পরিবর্তন। বেলিস বলেছিলেন ‘আক্রমণাত্মক এবং কৌশলী’ ক্রিকেটের কথা, ইংল্যান্ড দল এনেছে এ দুটোর মধ্যে একটা অসাধারণ ভারসাম্য। ২০১৭-এর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালের কথাই ধরা যাক, সাবধানী ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ৪৯.৫ ওভারে মাত্র ২১১ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের পরে হতাশার কথা জানিয়েছিলেন অধিনায়ক মরগান।

nnn

n

জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয়; Image Source: Getty Images

nnn

তবে ইংল্যান্ডের জন্য সুবিধাজনক বিষয় ছিল, ওয়ান ডাউনে জো রুটের মতো একজন বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান পাওয়া। মাঝের ওভারে ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলে রানের গতি সচল রাখা, ৮০-৮৫ স্ট্রাইক রেট বজায় রাখা, এর পাশাপাশি মরগান-বাটলার-স্টোকসের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে সঙ্গ দিয়ে যাওয়া। পরের তিনজন ততদিনে মাঝে আইপিএল খেলে ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। ওদিকে ‘১৫ থেকে ‘১৮, এই সময়ে ইংল্যান্ড খেলেছে মূলত নিজেদের মাঠে, চেনা কন্ডিশনে। কিন্তু বিশ্বকাপ যেহেতু আইসিসি-পরিচালিত, পুরোপুরি নিজেদের চেনা কন্ডিশন পায়নি ইংল্যান্ড। প্রথম পর্বেই তাই তারা হেরে বসে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার কাছে। অবস্থাটা এমন দাঁড়ায়, আর কোনো ভুল করার সুযোগ ছিল না ‘থ্রি লায়ন্স’দের সামনে।

nnnn

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে, বার্মিংহামে একটা টিম মিটিংয়ে বসে ইংল্যান্ড দল। ঐ টিম মিটিংয়ে বেন স্টোকস বলেছিলেন তার আশঙ্কার কথা, চেয়েছিলেন সতীর্থদের সাথে কথা বলে এর সমাধান করতে। সতীর্থরা একটা ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন, ভারতের বিপক্ষে যদি হারতেই হয়, তবে তারা নিজেদের খেলাটা খেলেই হারব। যে খেলাটা খেলে এই পর্যন্ত এসেছেন তারা, তার অন্যথা করতে চাইলেন না তারা।

nnnn

এজবাস্টনের ফ্ল্যাট পিচে ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৩৩৭ রান করে ইংল্যান্ড, এরপর চেস্টার-লি-স্ট্রিটে নিউ জিল্যান্ডকে ১১৯ রানে পরাজিত করে নাম লেখায় সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রায় নিখুঁত খেলাটা খেলে ইংল্যান্ড, ২২৩ রানে অজিদের আটকে দিয়ে লক্ষ্যটা তাড়া করে ফেলে ১৭.৫ ওভার হাতে রেখে।

nnn

n

বেন স্টোকস এবং জস বাটলার; Image Source: Getty Images

nnn

ফাইনালটা অবশ্য এতটা সহজ ছিল না ইংল্যান্ডের জন্য। স্টোকস আর বাটলারের ১১০ রানের যে জুটিটা ইংল্যান্ডকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেল, সেটা তো বেলিসের ঐ ‘আক্রমণাত্মক আর কৌশলী’ ক্রিকেটের উদাহরণই। এই আক্রমণাত্মক আর কৌশলী ক্রিকেটই চার বছর আগে বিশ্বমঞ্চে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নেওয়া দলটাকে চার বছর পরে এনে দিলো বিশ্ব আসরের শিরোপাটাই। সম্ভাব্য সূক্ষ্মতম ব্যবধানে জেতা ঐ শিরোপাটার পেছনে ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল বটে, কিন্তু আগের চার বছরের পরিকল্পনা আর পরিকল্পনার বাস্তবায়নের বিচারে ইংল্যান্ডকে অযোগ্য দল বলার কোনো সুযোগ নেই।

nnnn

অথচ এবারের বিশ্বকাপে যেন দেখা গেল না সেই ইংল্যান্ডের ছায়াটুকুও! কী এমন হয়ে গেল দলটায়?

nnnn

(চলবে…)

nnnn

[ব্যবহৃত সকল তথ্য বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত]

n

dailycrunch.net

dailycrunch.net

Articles: 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *