n
ওই তো, দলটা অস্ট্রেলিয়া বলেই।
nnnn
স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার মতো সম্ভ্রম জাগাচ্ছিল না কোনোভাবেই। ঠিকঠাক দল বানানোর সুযোগই যে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর প্রমাণ মিলছে সরল এক পরিসংখ্যানে, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল মাত্র চার ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়া এক অধিনায়কের ওপর ভরসা করে। বিশ্বকাপের আগের ফর্মটা যাচ্ছেতাই, সিরিজ হেরে আসতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। টুর্নামেন্টের শুরুটাও দুঃস্বপ্নের মতো, প্রথম দুই ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ১০ দলের মধ্যে ১০ নম্বরে, এই দিনও দেখা লেগেছে। সঙ্গে যোগ করুন খেলোয়াড়দের অদ্ভুত সব চোটের মিছিল, ছুটিছাটার উপলক্ষ্য। এমন বিশৃঙ্খলায় বাঁধা পড়া দলটাই যে মাসদেড়েক বাদে বিশ্বকাপ জিতে গেল ষষ্ঠবারের মতো, ‘ওরা অস্ট্রেলিয়া’ ছাড়া এর আর কী ব্যাখ্যা হবে বলুন?
nnn
nnn
হ্যাঁ, খুঁজতে বসলে ক্রিকেটীয় কারণ পাওয়া যাবে বেশ কিছু, যার শুরুটা হবে প্রথম ১০ ওভার থেকেই। প্রথম কয়েক ওভার ধরে খেলার নীতি থেকে বেরিয়ে ‘প্রথমেই আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দাও’ – ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সফলতার সূত্র ছিল এটাই। একই ছাঁচে এবারও একই রকম কিংবা তার চেয়েও রুদ্রমূর্তিতে ধরা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কেবল ‘ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনটা কাজে লাগাতে পারেন’ দেখেই ট্রাভিস হেডের জন্য বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচ ১৪ জনের বহর হয়ে ঘুরেছিল অস্ট্রেলিয়া। হেড বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই দেখিয়েছেন, অপেক্ষাটা বৃথা যায়নি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লেতে তুলেছিল বিনা উইকেটে ১১৮, টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ। সেমিফাইনালের লো-স্কোরিং থ্রিলারটাও যে অস্ট্রেলিয়াই পকেটে পুরতে পারল বহু জল ঘোলার পরে, সেটা তো প্রথম ১০ ওভারে ৭৫ রান তুলে রেখেছিল বলেই। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম পাওয়ারপ্লেতে অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছে ওভারে ৬.৪৪ করে। এক ভারত ছাড়া আর সব দলের চাইতে সংখ্যাটা বড়।
nnn
nnn
অস্ট্রেলিয়া প্রতিপক্ষের জন্য কাজটা কঠিন করেছিল বোলিং পাওয়ারপ্লের প্রথম ১০ ওভারেও। সেটা পুরো টেস্ট মেজাজি বোলিং করেই। খুব একটা সুইং, সিম মুভমেন্ট মেলেনি পিচ থেকে, উইকেট সংখ্যা দেখে তাই তাদের অবদানটা ঠিক বোঝা যাবে না; যা বুঝতে হলে তাকাতে হবে তাদের ধারাবাহিকতা আর ইকোনমি রেটের দিকে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত খেলা ১০ ম্যাচে তাদের প্রথম পাওয়ারপ্লে ইকোনমি রেটটা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেরা। যা সম্ভব হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা ৪৫ শতাংশ বল গুড লেংথে, মানে পিচের ৬-৮ মিটার অঞ্চলে ফেলেছেন বলে। গোটা টুর্নামেন্টেই এত ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি আর কোনো দলের পেস-অ্যাটাক।
nnnn
প্রথম পাওয়ারপ্লেতে এমন ‘আটকে রাখা’ বোলিংয়ের ফায়দাটা পরে এসে তুলেছেন অ্যাডাম জাম্পা। টুর্নামেন্টের শুরুতে নিজেকে হারিয়েই খুঁজছিলেন, কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হতে হতে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট-সংগ্রাহক তিনিই।
nnn
nnn
কেবলমাত্র পাওয়ারপ্লে ব্যাটিং-বোলিংটাই ‘প্রভাবক’ হলে অস্ট্রেলিয়া নয়, ভারতই বিশ্বকাপ রেখে দিত ঘরে। কিন্তু, দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ব্যাটিং গভীরতাও। ফাইনালে ভারতের শুরুটা ভালো হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার চাইতেও, গোটা টুর্নামেন্টেই যেমন সূচনা এনে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তবে অন্য ম্যাচের সঙ্গে এদিন পার্থক্য যা হলো, ১১ ওভারের মধ্যেই ভারত হারিয়ে ফেলল প্রথম চার ব্যাটারের তিনজনকে। মোহাম্মদ শামিকে নামতে হবে আট নম্বরে, ‘খুব একটা ব্যাটিং বাকি নেই’ ভাবনায় ভারতের ব্যাটাররা এরপরে ঢুকে গেলেন খোলসে। ১১-৪০ ওভারের মাঝে মাত্র নয়বার চার মারার চেষ্টা করতে দেখা গেল তাদের। পাওয়ারপ্লের পরের ৪০ ওভারে বল বাউন্ডারির বাইরে গেল মাত্র চারবার। লোকেশ রাহুল তো হাত খুলতেই চাইলেন না। ‘’আর ব্যাটার নেই’ ভয় ছাড়া যার পেছনে কোনো কারণ পাওয়া যাচ্ছে না।
nnnn
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ওপরের ব্যাটারদের এই শঙ্কাটা কিন্তু হয়নি। টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার ৮-১১ নম্বর ব্যাটাররা রান করেছেন ১৬.৬৮ গড়ে, ইংল্যান্ডের পরে সবচেয়ে বেশি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্যাট কামিন্স ক্যামিও খেলে দিলেন একদিন তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা জামিন পেল অ্যাডাম জাম্পার ব্যাটিংয়ে। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে কামিন্সের ৬৮ বলের ১৩ রানের ইনিংস তো ক্রিকেট-রূপকথারই অংশ এখন। পুরো টুর্নামেন্টেই অস্ট্রেলিয়ার মিডল-অর্ডার সমর্থন যোগাতে পারেনি তেমন করে, তবে শুরুর প্রলয়ঙ্করী ব্যাটিং আর লেজের সমর্থন, অস্ট্রেলিয়াকে আটকানো যায়নি।
nnn
nnn
আটকানো যায়নি ৯৩ হাজার দর্শকের কানে তালা লাগানো চিৎকারেও। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাচ মিসের মহড়া দেখে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল, আসলেই গায়ে হলুদ জার্সি জড়ানো দলটা অস্ট্রেলিয়া। সেই দলটাই সেমিফাইনাল আর ফাইনাল কব্জা করে নিলো ফিল্ডিং নৈপুণ্য দেখিয়ে। ক্রিকভিজের দেওয়া তথ্য বলছে, এই দুই ম্যাচে কেবলমাত্র ফিল্ডিং দিয়েই দলটা বাঁচিয়েছে ৪৪ রান।
nnnn
ট্র্যাভিস হেড অবশ্য দাবি করবেন, সংখ্যাটা ৪৪ দুগুণে ৮৮-ও হতে পারত পেছন দিকে ১১ মিটার দৌড়ে গিয়ে রোহিতের ওই ক্যাচ না ধরলে। ম্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে, ফাইনাল হারের শঙ্কা, অন্তহীন চাপ – অস্ট্রেলিয়ানরা কীভাবে যে এমন মুহূর্তেই নিজেদের সেরাটা বের করে আনে!
nnnn
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মিরাকল থেকে অ্যাডাম জাম্পার ফর্মে ফেরা – সব ধাঁধা মিলে যাওয়ার ব্যাখ্যা বোধহয় ওই প্রথম লাইনেই।
nnnn
দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া।
n